কর্তার মর্জিতেই কর্ম,মানতেই হবে
- আপলোড সময় : ১৭-০২-২০২৫ ০৮:১০:২২ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৭-০২-২০২৫ ০৮:১০:২২ পূর্বাহ্ন

চলতি বছরের গত পঁয়তাল্লিশ দিনে শান্তিগঞ্জ উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছ। ঘটেছে খুনোখুনির ঘটনা, হয়েছে চুরি ও ডাকাতি। এসব ঘটনায় উদ্বিগ্ন এলাকাবাসীবাসী। আইন-শৃঙ্খলার এমন অবনতি থেকে দ্রুত উত্তরণ চান তারা।’ সাংবাদিক এমন অস্থির ও অশান্তিময় পরিস্থিতির কথা বলেন এবং একের পর এক ঘটনার বিশ্বস্ত বর্ণনা দেন। অথচ জিজ্ঞাসিত হয়ে শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, ‘শান্তিগঞ্জ উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এই উপজেলায় কোনো ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি। আপনারা (গণমাধ্যমকর্মী) এটাকে টেনে ডাকাতির ঘটনা বানিয়েছেন। চুরি এবং ডাকাতির মাঝে সংজ্ঞা আছে না? ফৌজদারি কার্যবিধিতে চুরি এবং ডাকাতির সংজ্ঞা আছে। সংজ্ঞার ভিতরে ফেলে এগুলোকে মূল্যায়ন করতে হবে। ডাকাতি তো হয় নাই, চুরির ঘটনায়, খুনের ঘটনায়, মামলা নেওয়া হয়েছে। তদন্ত চলমান, আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সাংবাদিক ও থানা কর্মকর্তার এবংবিধ পরস্পরবিরাধী দৃষ্টিভঙ্গিসঞ্জাত মূল্যায়নের ফাঁকতালে পড়ে সমাজের সামাজিকতা উচ্ছন্নে গিয়ে বিপন্নতায় পর্যবসিত হওয়াটা কিন্তু আড়াল পড়ছে না বরং প্রতিভাত হচ্ছে আরও বেশি করে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এবংবিধ তারতম্যের পরিসরে শান্তিগঞ্জ অশান্তির সমুদ্রে হাবুডুবু খাবে, মনে হচ্ছে এটাই চিরন্তন ও স্বাভাবিক আর্থসামাজিক নিয়ম, শান্তি প্রতিষ্ঠার ধারক-বাহক থানা কর্তৃপক্ষ, ‘মামলা নেওয়া হয়েছে। তদন্ত চলমান, আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে’র মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবেন। এবং বোধ করি এমতাবস্থা দেশজুড়েই বিদ্যমান রাখা হবে।
কোনও কোনও বিশেষজ্ঞ বলে থাকেন আমাদের সমাজে একধরণের কাঠামোগত সহিংসতা বিদ্যমান আছে। সংঘটিত ঘটনা সম্পর্কে সাংবাদিক ও থানা কর্মকর্তার পৃথক পৃথক দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যায়ন সমাজে এই কাঠামোগত সহিংসতার বিদ্যমানতাকে প্রমাণ করে এবং সাংবাদিক ও থানা কর্মকর্তার মধ্যে ঘটনার বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়ন করা না করার বিতর্ক যথারীতি এভাবেই উসকে দেয়। সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এবংবিধ বিতর্ক কীছুতেই কাম্য নয়।
জানা কথা, চুরিই বলুন আর ডাকাতিই বলুন, থামানো যাবে না। চুরি কিংবা ডাকাতি না করে কেউ অর্থ জমাতে পারে না, যদিও সেটাকে ব্যবসায় কিংবা বাণিজ্য বলে চালিয়ে দেয়ার নিয়ম করে ছাড়পত্র দেওয়া হয়ে থাকে। এই দেশে কালো টাকা সাদা করার সংস্কৃতি চালু আছে। যাকে বলে চুরি-ডাকাতিকে বৈধ করে দেওয়া বা দায়মুক্তি দেওয়া। আইন চুরি ও ডাকাতির সংজ্ঞা নির্ধারণ করে দুটিকে পৃথক করে দিয়েছে, যদিও দুটিরই মূল কথা সম্পদ অপহরণ, চুরি মালিকের অজান্তে ও ডাকাতি মালিকের উপস্থিতিতে বলপূর্বক সংঘটিত হয়। আসল কথা আইন নিজেকে নিজে প্রয়োগ করে না আইন প্রযুক্ত হয় নির্ধারিত মানুষ কর্তৃক, মানুষের মর্জিমতো। মানুষের মর্জির তাঁবেদারি করতে গিয়ে আইন শেষ পর্যন্ত নিজে নিজের পথে চলতে পারে না, ভ্রষ্ট হয়ে অশান্তি ডেকে আনে। কালো টাকা সাদা হয়ে যেতে পারলে ডাকাতি চুরি হয়ে যেতে দোষ কোথায়? সুতরাং থানা কর্মকর্তার মর্জিই আপাতত নিয়ম। কথা হলো, ডাকতি নয় চুরিই সংঘটিত হয়েছে, তিনি এই চুরি বন্ধ করে দিন, তবেই হবে। কিন্তু তিনি তাও পারবেন না।
বর্তমান আর্থসামাজিক বিন্যাসকঠামোর তাঁবেদার ও সবচেয়ে তৎপর রক্ষক তাঁর পক্ষে এই চুরিটিও বন্ধ করা সম্ভব না। কারণ শান্তিগঞ্জের চুরি বন্ধ হয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা হলে সমগ্র দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ খোলে গিয়ে থানাগুলো কার্যত অকেজো হয়ে পড়ে পুলিশপ্রশাসনের কোনও দরকার পড়বে না। এমন অবস্থা তো হতে পারে না।
এক কৌতুকী দোষৈকদর্শী বলেছেন, কারণ ব্রিটিশ আমলে দারোগা পদ সৃষ্টি করা হয়েছিল মহারাণী ভিক্টোরিয়ার পক্ষ থেকে ভারতবাসীতে ডান্ডা মেরে ঠান্ডা করার জন্যে। অর্থাৎ ভালোমতো শাসন করার জন্যে। দেশ থেকে ব্রিটিশরা চলে গেছে বটে কিন্তু তাদের করা আইন তো আর দেশ ছেড়ে চলে যায় নি। সুতরাং ‘কর্তার মর্জিতে কর্ম’, তার কোনও অন্যথা নেই। মানতেই হবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ